ঢাকা,রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

মাথাচড়া দিয়ে উঠছে কয়েকটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ

ডেস্ক রিপোর্ট ::
উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে দিনদিন মাথাচড়া দিয়ে উঠছে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ। ক্যাম্প ভিত্তিক গড়ে উঠা এসব গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত মারামারি, খুন, অপহরণ এবং ডাকাতির মতো অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে। এ অবস্থায় চরম অনিরাপধ হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। ক্যাম্পের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রভাব পড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। যার ফলে উদ্বেগ,উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে স্থানীয়দের।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্প ভিত্তিক কতিপয় রোহিঙ্গা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা গ্রুপ ছোট ছোট কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম শুরু করেছে ক্যাম্পে অভ্যান্তরে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছেনা। সাধারণ রোহিঙ্গারা জানান, উক্ত সন্ত্রাসী গ্রুপের কাছে অন্যান্য রোহিঙ্গারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। তারা এমন কোন অপরাধ নেই যা করছেনা। কিন্তু নিরাপত্তার অভাবে কেউ মুখ খুলতে চাইনা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যান্তরে বসবাসকৃত স্থানীয় লোকজন জানান, রোহিঙ্গারা নিজেদের আধিপত্য জানান দিতে প্রতিরাতে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায়। একই সাথে গ্রুপের সদস্যদের আরো প্রশিক্ষিত করতে ক্যাম্পের আশেপাশের গহীন জঙ্গলে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র দাবি করছে প্রতি রাতেই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে ক্যাম্পে। দু’পক্ষের মাঝে গোলাগুলি নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। আর এসব ঘটনার সাথে জড়িত থাকে রোহিঙ্গা মাঝিরা। তাদের দাবি, রোহিঙ্গা ডকাত হাকিমের অনুসারীরা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসব গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করছে। “আল ইয়াকির বা আরসার” বাইরে নিজের একটি গ্রুপ তৈরিতে ব্যস্ত তারা। রোহিঙ্গা যুবকদের নিয়ে সে তার সা¤্রাজ্য গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন বলে দাবি রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতা, সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ সিকদার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার কারনে ক্যাম্পে শত শত সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে। যারা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা এসব সন্ত্রাসীদের কারণে স্থানীয়রাও এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে।
বিশেষ করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের একটি ব্লকে রোহিঙ্গারা জার্মানির ৩ সাংবাদিকসহ এক স্থানীয়কে মারধর করে। এখন নিয়মিতই এ ধরণের ঘটনা ঘটছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। তুচ্ছ ঘটনায় হামলা, সংঘর্ষ, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া, খুন এখন যেন নিত্য ব্যাপার।
পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরে বিভিন্ন ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩২ জন মারা গেছে। মোট ৩১২টি ঘটনায় আসামি হয়েছেন ৬৫০ জন। স্থানীয়দের দাবি, ক্যাম্পের ভেতরেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গ্রুপ। ক্যাম্পের বেশিরভাগ ঘটনাই পরিকল্পিত। যার উদ্দেশ্য, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন ও ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া বানচাল করা।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলো নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ৫টি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তবুও কিছু কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মাথাচড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। পুলিশ এসব সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে ক্যাম্পে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদকও পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, সমস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে এসব সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে, অন্যথায় এই পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে, যা আমাদের জন্য ভয়ংকর হবে।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, নানা কারণে রোহিঙ্গারা সহিংস হয়ে উঠছে। তার মধ্যে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বাজার গড়ে উঠছে। এগুলোর ভাড়া ও চাঁদা নিয়ে তাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও বিভেদ রয়েছে। এরপরও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধে পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: